123 Main Street, New York, NY 10001

জেলায় দিন দিন বেড়ে চলেছে বিলাতি ধনিয়া পাতার আবাদ। কম খরচে অধিক লাভের পাশাপাশি বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বাড়তেই এই পাতা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। আকর্ষণীয় স্বাদ, তীব্র গন্ধ এবং আকারে বেশ বড় এই মসলাজাতীয় উদ্ভিদ বর্তমানে জেলার অন্যতম লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। বিশেষ করে শিবপুর, বেলাবো ও মনোহরদী উপজেলার কৃষকেরা এই পাতার চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন। এই তিন উপজেলার কৃষকেরা এখন বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষে সফলতা লাভ করছেন এবং তার ফলে তাদের আয়ের পরিমাণ বাড়ছে।

শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক জজ মিয়া (৬০) প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করেন। সম্প্রতি তার ১০ শতক জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার আবাদ করেছেন এবং ইতোমধ্যে ওই জমি থেকে তিনি ৭২ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। ভবিষ্যতেও তিনি আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তার এই আবাদে ব্যয় হয়েছে মোট ১৮ হাজার টাকা।

জজ মিয়া বলেন, আগে এই পাতার চাহিদা খুব কম ছিল। কিন্তু এখন রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর কদর বেড়েছে। খরচ কম, যত্ন কম, তবুও লাভ বেশি হওয়ায় এই ফসলের চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা জুলেখা বেগম (৫০) বলেন, ৮ শতক জমিতে ১২ হাজার টাকা খরচ করে তিনি বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করেছেন এবং আরও ১০-১২ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করার আশা করছেন। তিনি বলছিলেন, এই ধনিয়া পাতার চাষে সার, পানি ব্যবহারে খরচ খুবই কম, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক।

স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি বিলাতি ধনিয়া পাতা আকারভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এই পাতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বটেশ্বরে একটি বিশেষ বাজার গড়ে উঠেছে, যেখানে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন কিনতে।

স্থানীয় কৃষকরা বেশিরভাগ মনে করেন, সরকার যদি বাজার ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ায়, তবে এই পাতা রপ্তানির যোগ্য পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এর উৎপাদন বেশি হয়, ফলে সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নরসিংদীতে ৫৫ একর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। ধনে পাতার আবাদ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পাতাগুলো তুলনামূলক বড়, শক্তিশালী গন্ধ ও ঝাঁজালো স্বাদের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ঘরোয়া রান্নায়েও এর ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া, এই স্থানীয় উৎপাদিত ধনিয়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয়।

অর্থনীতিতে এই ফসলের গুরুত্ব বাড়তে থাকায় কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এখানে এসে ধনিয়া কিনছেন। বাজারে সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় জমে।

বটেশ্বর বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল আলীম (৪৫) বলেন, আমি এখানকার বাজার থেকে পাতাগুলো কিনি, কেজি দরে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দামে ডাকে, তারপর ঢাকায় পাঠাই। খরচ বাদে প্রতি কেজিতে প্রায় ৮-১০ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, এখানকার ধনিয়া খুবই মানসম্পন্ন ও স্বাদে ঝাঁজালো।

নরসিংদী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু কাউছার সুমন বলেন, ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ধনিয়া পাতায় তিন ধরনের ভিটামিন রয়েছে—ভিটামিন এ,সি ও কে। ভিটামিন এ ত্বক ভালো রাখে, ভিটামিন সি পেটের কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করে আর ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এজন্য, বদহজম বা কোস্টকাঠিন্য থাকলে ধনিয়া পাতার সরবত উপকারী।’

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষে মাটি বা আবহাওয়া কোনো বিশেষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনা। অনাবাদি জমি, বালি বা ফলের বাগানেও এর ফলন ভালো হয়। সাধারণত অল্প সেচ, জৈব সার ও পরিচর্যায় এর উৎপাদন সম্ভব।

নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বেলাবো উপজেলা কর্মকর্তা মহিবুবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিলাতি ধনিয়া এখন একটি লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমরা নিয়মিত বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে আধুনিক চাষের পদ্ধতি পালন করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, সঠিক পরিচর্যায় এক বিঘা জমিতে এই ধনিয়া চাষ করে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম, তাই কৃষকেরা এই ফসল থেকে ভালো মুনাফা পাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিলাতি ধনিয়ার এই আবাদ নরসিংদীর কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ধনিয়া বাংলাদেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *