123 Main Street, New York, NY 10001

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেমে এইচডিটি চক্র জালিয়াতি করে অর্থ উত্তোলন করেছে। তারা অন্যের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেটা ভেঙে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে, তারা প্রায় ২৫ লাখ টাকা অনলাইন পদ্ধতিতে স্থানান্তর করে ফেলেছে, এবং আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে পড়ে আটকে দেওয়া হয়। এই জালিয়াতি বাংলাদেশের মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যখন ওই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড তারাই জালিয়াতদের দিয়েছিল। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা, এবং এখন মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেছেন, জালিয়াতিতে অভিযুক্তরা চিহ্নিত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঞ্চয়পত্রের সিস্টেম পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, যে কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতি চালানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দাখিল করেন, যেখানে তাদের মুনাফাসহ মূল টাকা সরাসরি জমা হয়। এরপর সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ বা সুদ সংক্রান্ত যেকোনো পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট অফিসে। আবেদন নিশ্চিত হওয়ার পর, গ্রাহকের মোবাইলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হয়। উপস্থিত গ্রাহক তখনই সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মীর কাছ থেকে সেই ওটিপি দেখানোর পরই তথ্য পরিবর্তন কার্যকরণ হয়। সব তথ্যই সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ হিসেবে রেকর্ড থাকে।
তবে দেড় বছর ধরে অনেক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে বাধার মুখে আছেন গ্রাহকরা। কিছু ব্যাংকে প্রবাসী আয় বা সঞ্চয়পত্রের টাকা থাকলেও গ্রাহকেরা নির্ধারিত সময়ে তা তুলতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ব্যাংক পরিবর্তন করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সুযোগে কেউ জালিয়াতির ঘটনা ঘটাতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এক ব্যক্তি ২৫ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র কেনেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি রয়েছে উল্লেখযোগ্য অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিন পরে, সোমবার, তার সেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তোলার চেষ্টা করা হয় অন্য একটি ব্যাংক, এনআরবিসির দিনাজপুর শাখায়। পরে, সেই টাকা কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য কারও আইডিতে স্থানান্তর করা হয়।
অন্যদিকে একই দিনে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে যথাক্রমে ৩০ লাখ ও ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলতে চেয়েছিল অপরাধীরা, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসার পরে অবিলম্বে আটকে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনটি পৃথক ঘটনায় গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেছে। জানা গেছে, তারা কোনো আবেদন করেননি, তাই তাদের মোবাইলে কোনো ওটিপি যায়নি। পাশাপাশি, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পাসওয়ার্ড বা অনুমতিপত্র থাকলেও, এখন তাদের পাসওয়ার্ড বদলানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জালিয়াতির পেছনে পাসওয়ার্ডের ব্যবহার রয়েছে, ফলে যেসব কর্মকর্তার কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তারা সন্দেহের ঝুঁকিতে আছেন। এ ছাড়া, বাইরের কারো আইনি বা অন্য কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, আগস্টের পর্যন্ত, ব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে মোট ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিসের প্রায় ১২ হাজার শাখায় কেনা ও ভাঙার কার্যক্রম হয়।
এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন এমডি তৌহিদুল আলম খান বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি, তারা কাজ করছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *