123 Main Street, New York, NY 10001

প্রবল ও তীব্র শক্তিশালী হারিকেন মেলিসা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিভিন্ন এলাকায পুরো পাড়া-প্রতিবেশী প্লাবিত হয়েছে, এবং কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিশেষ করে জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় devastating এই ঝড়ের ফলে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। দ্বীপ দেশগুলোর বেশিরভাগ এলাকা এখনো বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর)।

প্রথমত, ঝড়ের কেন্দ্র ছিল জ্যামাইকা, যেখানে ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে শক্তিশালী ক্যাটাগরি-৫ স্তরের এই তাণ্ডব আঘাত হেনেছে। এখনও পর্যন্ত এ ঝড়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানিয়েছেন, “পুরো দেশটাই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে,” তিনি আরও বলেছিলেন, “৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ উড়িয়ে গেছে। হাসপাতাল, লাইব্রেরি, পুলিশ স্টেশন ও বন্দরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত।”

অপর দিকে, হাইতিতে ভয়াবহ বন্যার কারণে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনই শিশু। মেলিসার শক্তি কেটে যেতে থাকলেও, এটি এখনও ক্যাটাগরি-১ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে স্থানীয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়ে যাচ্ছে।

ঝড়ের কারণে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। স্থানীয় সরকারের মুখপাত্র ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, “তিনজন পুরুষ ও এক নারী বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিলেন, এবং পরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এছাড়া, তিন-চতুর্থাংশ এলাকা বিদ্যুতবিচ্ছিন্ন রয়েছে। মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন জানান, “শহরের অর্ধেক অংশ পানিতে নিমজ্জিত। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য— সবাই সুস্থ ও নিরাপদ আছে কি না, তা নিশ্চিত করা।”

কিংস্টনের গর্ডন সোয়াবি নামে একজন ব্যবসায়ীর ভাষ্য, “আমার কাজিনের পুরো বাড়ি ধসে পড়েছে। সে সমুদ্রের বাড়িতে স্বপ্ন বুনেছিল, এখন সব কিছুই শেষ।”

অন্যদিকে, পর্যটক পিয়া শেভালিয়ে জানান, “রাতভর জানালাগুলো কাঁপছিল, ভয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।”

ঝড়টি কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানার পর, এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত এই ঝড় তেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করেছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস-কানেল দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে ক্ষতিপূরণ কম হয়।”

এই পরিস্থিতির কারণে, হাইতিতে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যান। ক্রিস্টিয়ান সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিলিফের কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেছেন, “অনেক বাড়ি উপকূলের ভেসে গেছে, অনেকেই ধ্বংসস্তূপ সরাতে খালি হাতে কাজ করছেন।”

অপর দিকে, জ্যামাইকার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পাঠাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হাইতি ও বাহামাসে সামরিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থা সামাল দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, একটি বিশেষ দুর্যোগ মোকাবিলা দল জ্যামাইকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছে।

এদিকে, স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ঝড়টি বাহামাসের দিকে এগিয়ে গেছে, যেখানে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এরপর এটি আরও উত্তর-পূর্বের দিকে এগিয়ে গিয়ে বারমুডা ও কানাডার সেন্ট জনস অঞ্চলে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে, যেখানে এক শক্তিশালী এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনের সৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *