123 Main Street, New York, NY 10001

আইনসম্মানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেনা কর্মকর্তারা আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্তদের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম সারোয়ার হোসেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে বিচারকাজের শুরুতেই এই ঘটনাটি ঘটে, যখন সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

সারোয়ার বলেন, গত ৮ অক্টোবর তিনটি আলাদা মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি নথিপত্র ছাড় করা হয়। এই মামলাগুলিতে সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর সেনা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আটক করে হেফাজতে নেয়। আজকের পরীক্ষার দিন ছিল, যেখানে তারা স্বেচ্ছায় আদালতকে সম্মান জানিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি আরও জানান, আদালত তাদের ওকালতনামা স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছে এবং তিনটি আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি জামিনের জন্য। এছাড়া প্রিভিলেজ সংক্রান্ত বিষয় রয়েছে, যেমন- সাবজেল ও অন্যান্য সুবিধা।

সাবজেল সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব কর্মকর্তা পলাতক, তাদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে পরের মাসের ২০ নভেম্বর। বর্তমানে তাদেরকে সেনানিবাসের সাবজেলে স্থানান্তর করা হবে।

আইনজীবীর মতে, প্রশাসনিকভাবে এই কর্মকর্তা ও তাদের আত্মসমর্পণ বলেই গণ্য হবে, কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার বা আটক করেনি, বরং সুবিধাজনক পরিবেশে আনানো হয়েছে। নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি গাড়ি ব্যবহৃত হয়।

আজ সকাল ৮টার দিকে তিনটি মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে, তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল-১ এর নেতৃত্বে বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ১৫ জন কর্মকর্তা এবং অন্য আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই দিনটি ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করে। এর মধ্যে র‌্যাবের গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চলমান পলাতক ব্যক্তিদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য সময় ধরা হয়েছে ২৯ অক্টোবর। একইসঙ্গে, পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ নভেম্বর তারিখ নির্ধারিত হয়।

আরেকটি মামলায়, যেখানে গুমের অভিযোগে জেআইসি সেলে ১৩ জন আসামি হাজির করা হয়, সেখানে একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। সেই সঙ্গে পলাতকদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তাছাড়া, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনায় রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জন নিহত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুজন আসামি হাজির হন। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক থাকলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য্য করা হয়।

৮ অক্টোবরের মধ্যে, মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যে ১৭, ১৩ এবং ৪ জন আলাদা করে অভিযুক্ত। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার নাম এবং সেনা কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কর্নেল, মেজর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন অনেকে অবসরপ্রাপ্ত।

এদিকে, এসব কর্মকর্তাদের আদালত হাজির করার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *