123 Main Street, New York, NY 10001

ভারতের হুসেনাবাদে ৯০ বছর বয়সী ফাইয়াজ আলী খান তার ‘ওয়াসিকা’ বা রাজকীয় পেনশন গ্রহণ করতে পিকচার গ্যালারিতে আসেন। বয়সের ভারে তার হাতে আর কিঞ্চিত কাঁপুনি দেখা গেলেও তার চোখে এখনও উজ্জ্বলতা ও গৌরবের ছোঁয়া মেলে। ফাইয়াজ আলী খান এমন এক প্রাপকের মধ্যে একজন, যিনি আওয়াধ রাজবংশের উত্তরাধিকার সূত্রে এই পেনশন পান। ‘ওয়াসিকা’ শব্দের অর্থ ফারসিতে চুক্তি বা আসমানি অঙ্গীকার। এটি মূলত প্রাচীন অযোধ্যা অঞ্চলের নবাবদের ও তাদের সহযোগীদের জন্য মঞ্জুর করা হত। ১৮৫৬ সালের পূর্বে, অযোধ্যার নবাবরা এই অঞ্চল শাসন করতেন। যদিও বর্তমান ভারতে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটেছে, কিছু রাজ্য যেমন উত্তরপ্রদেশ, কেরালা এবং রাজস্থান এখনও ঐতিহ্যগতভাবে নবাব পরিবারের জন্য ওয়াসিকা পেনশন চালিয়ে যাচ্ছে। এই পেনশনের পরিমাণ খুবই সামান্য, মাত্র মাসিক ৯ টাকা ৭০ পয়সা। তবে প্রাপকদের কাছে এটি কেবল অর্থ নয়, এই ঐতিহ্য ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ফাইয়াজ আলী খান বলেন, ‘এটি এক পয়সাও হোক, আমরা খরচ করে এটিকে গ্রহণ করতাম। এটি আমাদের পরিচয়ের অন্যতম অংশ।’ বর্তমানে প্রায় ১,২০০ জন ‘ওয়াসিকাদার’ এই পেনশন পেয়ে থাকেন। ওয়াসিকার পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়, বংশধরের সংখ্যা বাড়লে তা ভাগ হয়ে কমে যায়। ১৮১৭ সালে এই পেনশনের সূচনা হয়; তখন অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার স্ত্রী বহু বেগম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দুই কিস্তিতে ৪০ মিলিয়ন রুপি ঋণ দেন। এই ঋণের সুদ থেকে ঐতিহ্যবাহীভাবে প্রতি মাসে পেনশন দেওয়া হতো। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, কিছু ঋণ ব্যাংকে রাখা হয়। ওয়াসিকা সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে এসপি তিওয়ারি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে রাখা প্রায় ২৬ লক্ষ রুপির সুদ থেকে এই পেনশন দেওয়া হয়। কিছু সমালোচক মনে করেন, এই ওয়াসিকা আধুনিক সমাজের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। তবে যারা এটি পান, তারা একে ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতীক মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত রূপার এক তোলার (১১.৭ গ্রাম) ওজনের মধ্যে মূলত ওয়াসিকা প্রদান হত। ভারতের মুদ্রা চালু হওয়ার পর এর প্রকৃত মূল্য অনেক কমে গেছে। ফাইয়াজ আলী খান বললেন, ‘মানুষরা তখন ঘোড়ার গাড়ি বা টিমটমে চড়ে আসতেন, মহিলারা পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত পালকিতে আসতেন। এখন সেই প্রথাগুলো আর নেই।’ সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *