123 Main Street, New York, NY 10001

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রামে এক অত্যন্ত বিরল প্রজাতির পাখি শামুকখোলের অভয়ারণ্য রয়েছে। এই পুকুরের পাশে গাছে বাসা বেঁধেছে হাজার হাজার শামুকখোল, যা দীর্ঘ দুই দশক ধরে এখানে বসবাস করে আসছে। এই প্রজাতির পাখিগুলোর উপস্থিতি স্থানীয়দের জন্য করেছে এই গ্রামকে পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিত।প্রতিদিন সকালে পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। আশেপাশের এলাকার মানুষ তাঁরা এই পাখিগুলোর দেখার জন্য ভালোবাসা ও আগ্রহ নিয়ে আসেন। এই স্থানটি জনশক্তির মনে স্বস্তি ও আনন্দের প্রশান্তি এনে দেয়।জানা গেছে, কানাইপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির পাশের ওই পুকুর প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত। চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছ যেমন বট, নিম, তেতুল, আম, বাঁশঝাড়, যা প্রাকৃতিক আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। একসময় এই গাছে রাতচরা পাখি বাসা বাঁধত, কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে সেখানে শামুকখোল পাখিগুলো বুলবুলের মতো দখল করে নিচ্ছে পুরো স্থান।এখন এই পুকুরটি শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গাছে গাছে বাসা বাঁধা এই পাখিগুলোর পাশাপাশি অন্য পাখিরাও লক্ষ্য করা যায়, যেমন বক, কানা বক, শঙ্খ চোরা, পানকৌড়ি ও হরিয়াল। কিন্তু শামুকখোൾ তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি संख्या ধারন করে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির ডাকে পুরো গ্রাম মুখরিত হয় এবং স্থানীয় মানুষরা নিজের সন্তানের মতোই পাখিদের লালন করেন। পাখির ডিম খেতেও দেখা যায়, বাচ্চা ফুটে উঠে অবিলম্বে।জয়পুরহাট সদর উপজেলা থেকে এসে পাখি দেখার জন্য বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী আসছেন। তাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান রাশেদ বলেন, একসঙ্গে এত পাখি অন্য কোথাও দেখা যায় না। এখানে বিশাল সংখ্যক পাখি দেখার সুযোগ পেয়ে তিনি খুবই আনন্দিত।আরেক দর্শনার্থী, কালাই উপজেলার আবুল বাশার লাইফ, বলেন, শামুকখোল পাখি এখন অপ্রচলিত হয়ে গেছে। তাই এই প্রশস্ত কলোনি দেখে তিনি খুবই খুশি। তিনি সরকারের কাছে এই পাখির সংরক্ষণে আরও উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান।স্থানীয় বাসিন্দা তামিম আহম্মেদ বলেন, এই পাখিগুলো আমাদের গ্রামকে সবসময় প্রাণবন্ত করে তোলে। তারা আমাদের সচেতন করেন যেন পাখিগুলোর কোনও ক্ষতি না হয়। তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে পাখিগুলি বাসা বাঁধতে আসে, জুনে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়, আর শীতের সময় পাখিগুলি অন্যত্র চলে যায়। ফলে গ্রামবাসীর মন খারাপ হয় যখন পাখিগুলো চলে যায়।জাহাঙ্গীর আলম, এই পাখি কলোনির পৃষ্ঠপোষক, জানান, এই অতিথি পাখিগুলো এই এলাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে বাস করছে। তারা সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে। পাখিগুলোর নিরাপত্তায় কেউ তাদের বিরক্ত করেন না। তিনি জানান, এই পাখিগুলোর জন্য তিনি গর্ব অনুভব করেন এবং নিজ এলাকায় এই অভয়ারণ্য রক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, পাখিগুলোর বিষয়ে আমরা মনোযোগী এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা বা পরামর্শের জন্য সহায়তা করব।বিশ্বস্ত সংস্থা বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মহসিনা বেগম জানান, শামুকখোল পাখিগুলি মূলত প্রজননের জন্য বাংলাদেশে আসে। বড় হওয়ার পর এই পাখির দল রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। এই পাখিগুলো সাধারণত কলোনি আকারে থাকে এবং নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত খাবার পেলে দীর্ঘদিন এখানে থাকতে পারে। সরকারের সমর্থন থাকলে এই স্থানটি বিশ্ব পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *