123 Main Street, New York, NY 10001

আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারক সংস্থা মুডিস বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নবায়নের জন্য দেওয়া নতুন সুবিধা ‘ক্রেডিট নেগেটিভ’ বা ঋণের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সংস্থার প্রতিবেদন মতে, এই নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের উপর অস্থায়ী চাপ কিছুটা কমলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি ঝুঁকি বাড়াবে এবং ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলবে। ১৬ সেপ্টেম্বর মুডিসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মধ্যে বলা হয়, সমস্যায় পড়া ব্যবসাসমূহ ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করানোর সুযোগ পাবে। এই ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর বিরতিতে টাকা পরিশোধের সুবিধা দেওয়া হবে।

মুডিস মনে করছে, এই দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকায় ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত পরিশোধক্ষমতা যাচাইয়ে দেরি হতে পারে। এর ফলে খেলাপি ঋণের হার কৃত্রিমভাবে কম দেখানো হতে পারে এবং সম্পদের ঝুঁকি আড়ালে থাকতে পারে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—পুনঃতফসিলের পরে ৯০ দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এতে ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং ঋণখেলাপি হলে ক্ষতির ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাবে।

২০২২ সালে নিয়মকানুন শিথিলের কারণে ঋণ পুনঃতফসিলের প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও, প্রকৃত অর্থে ঋণ পুনরুদ্ধার হয়নি। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে অনাদায়ী ঋণের সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে মুডিস মনে করে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, যদি ঋণ পুনঃতফসিলের তদারকি ভালোভাবে না হয়, তবে স্বাস্থ্যবিহীন ঋণ ফর্দে দেখানো হতে পারে বাস্তবে ঝুঁকি এখনও থাকতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অনাদায়ী ঋণের হার ছিল মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১.১ শতাংশ। ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪.১ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর মূলধন-ঝুঁকি অনুপাত কমে ৩.১ শতাংশে দাঁড়ায়, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে। এর পাশাপাশি, অনাদায়ী ঋণের বিপরীতে সংরক্ষণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে।

মুডিস এর তালিকাভুক্ত তিন ব্যাংকের অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করেছে। এই ব্যাংকগুলো হল ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক।

সংস্থাটি বলেছে, ঋণগ্রহীতাদের চাপ কমাতে ও খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য ন্যূনতম সুদের হার থেকে কম সুদে ঋণ দেওয়ায়গা হয়েছে, যাতে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং ঋণদাতাদের ক্ষতি কমে। তবে, মাত্র ২ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের সীমা ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬ সেপ্টেম্বরের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান খেলাপি ঋণের জন্য কমপক্ষে ২ শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিতে হবে। বিনিময়ে ঋণ নিয়মিত হলে দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত বিরতিতে তার পরিশোধ করা যাবে। প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো ঋণ তিন বা তার বেশি বার পুনঃতফসিল করা হয়, তবে অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হবে। এ ছাড়া, যদি পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত সময়ে কিস্তি বা ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ আছে, আগে জমা দেওয়া অর্থ ওই ২ শতাংশ হিসেবে গণ্য হবে না। নতুন করে জমা দেওয়া অর্থের নগদায়নের ছয় মাসের মধ্যে আবেদনটি সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণখেলাপিদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে তাদের ক্ষতি কমানো যায় এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই সুবিধা চালুর ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকদের সম্মতির মাধ্যমে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন খেলাপি ঋণের পরিমাণ জুনের শেষে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৭.০৯ শতাংশ। বছরে এই ঋণের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *