123 Main Street, New York, NY 10001

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন আসছে পাকিস্তানের দিকে থেকে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে এবং নতুন আঙ্গিকে গঠন করতে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার ১৩ বছর পর এই প্রথম শীর্ষ পর্যায়ের একটি সফর সম্পন্ন করেন। এই সফরকে বাংলাদেশ-ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা হারানোর পর এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকায় এসে আনুষ্ঠানিক সফর করলেন, যার ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সূচনা হয়। এই সফরকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি হবে দুই দেশের অংশীদারিত্বের নতুন যুগের সূচনা। তিনি আরো জানান, গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে।

ইসহাক দার বলেন, আমাদের উচিত এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যেখানে দুই দেশের তরুণরা একসঙ্গে কাজ করবে, স্বপ্ন দেখবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। তিনি এই সফরকে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে ব্যাখ্যা হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেকটাই সুদৃঢ় হয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে থাকলেও সম্পর্কের এই উন্নতি অব্যাহত আছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, তবে অতীতের আস্থা ও বিশ্বাসের সমস্যা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। কিছু কূটনীতিক মনে করেন, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক আলোচনায় বসতে হবে এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে হবে।

সামরিক ও কূটনৈতিক খাতেও সম্পর্কের উন্নতি দৃশ্যমান। এরই মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং পররাষ্ট্র সচিবের পাকিস্তান সফর উল্লেখযোগ্য। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এই দ্রুতগতির কূটনৈতিক কৌশলরত্ন তার কারণ হয়তো ভবিষ্যত সম্পর্কের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলাই।

অতীতের ইতিহাসের ছায়া এখনও গভীর রেখায় রয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে লাখো বাঙালির জান-মাল কেড়ে নিয়েছিল। ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও, সেই দাগ স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানের কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনও পাকিস্তানের এই সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এসব পরিস্থিতির মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ফেরানোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও অল্প কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে, যেমন- মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ক্ষত, পাকিস্তানের কাছ থেকে সংশোধন চাওয়া, এবং দুই দেশের কিছু সংস্কৃতিগত ও রাজনৈতিক বিষয়। তবে, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যেও সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনের দৃঢ় সংকল্প রয়েছে।

চাইনিজ প্রভাবও এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্পষ্ট। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়ই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, বিশেষ করে সামরিক খাতে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের চীনা যুদ্ধবিমান কেনার কথা ভাবছে, যা ইতিমধ্যেই পাকিস্তান ব্যবহার করছে। তবে এতে জটিলতা বাড়ছে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে।

শেখ হাসিনা সরকার ও পাকিস্তানের আন্তঃরাজনৈতিক আলোচনা এই মুহূর্তে বেশ সক্রিয়। বৈঠক ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সম্পর্কের উন্নয়নের পেছনে রাজনৈতিক শান্তি ও অর্থনৈতিক যুক্তি কাজ করছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও চলমান এবং খুব শীঘ্রই এই সম্পর্ক আরও নিবিড় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাট, কেমিক্যাল, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য পণ্য পাকিস্তানে যাচ্ছে, এবং পাকিস্তানি পণ্যও বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই দেশের মোট জনসংখ্যা ৪৩০ মিলিয়নেরও বেশি, যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যার বাইরে এক বিশাল বাজারে রূপান্তরিত।

অতীতের ক্ষতো এখনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক বড় বাধা। বাংলাদেশ এখনও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নানা দুর্বিপাকের জন্য। ঐতিহাসিক এই ক্ষত যখনই উসকে উঠে, তখনই সম্পর্কের অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। পাশাপাশি, উর্দুভাষী মুসলমানরাও দুদেশের মধ্যে অমীমাংসিত এক বিষয়। তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, তবে স্বাধীনতার পরে তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সব পুরনো ক্ষত এখনো সমাধান হয়নি, তবে দিন বদলে গেছে, বর্তমানে দুই দেশ আড়াল থেকে বা স্পষ্টভাবে পুনর্মিলনের পথে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই পরিস্থিতিতে সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা। এই সুবর্ণ ক্ষেত্রে, কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে—এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *