123 Main Street, New York, NY 10001

অফিসে যেখানে দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বা হোয়াইট হাউসে থাকা নেতারা বসেন না কেন, তবুও অনেকের মনোভাব একই রকম হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে। গত ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও বিতাড়নের ঘটনাগুলো তাদের হৃদয় নাড়াতে পারেনি। তবে নেতাদের চিন্তা ভাবনা যেমনই হোক না কেন, জনতার মনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

গত বুধবার রয়টার্স জানিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন, জাতিসংঘের সব সদস্য দেশের উচিত ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এই জরিপটি রয়টার্স ও ইপসস পরিচালনা করে যেখানে ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন, এবং নয় শতাংশ অনীহা প্রকাশ করেছেন।

এই অনলাইনের জরিপটি ছয় দিন ধরে চলেছে এবং এতে অংশ নিয়েছেন মোট চার হাজার চারশো চব্বিশজন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ডেমোক্র্যেট পার্টির সমর্থকদের ৭৮ শতাংশ এবং ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির ৪১ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সহানুভূতির কথা বলেছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের খুব কাছের বল Alemanha যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিশাল পরিমাণে সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মনে ইসরায়েল সম্পর্কে যে পরিবর্তন এসেছে, এটি ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য খুবই দুঃসংবাদ।

ট্রাম্পের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে?

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেক মার্কিনির ধারণা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই নীতিটা চালু থাকা উচিত। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অর্থ শুধুমাত্র দেশের উন্নয়নের জন্য খরচ হওয়া উচিত।

এমন পরিস্থিতিতে রয়টার্স ও ইপসসের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলছেন, গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য যথাযথ সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করা উচিত। যেখানে ৫৯ শতাংশ মার্কিনি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল গাজায় অতিরিক্ত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।

৩১ জুলাই টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি বোঝাতে কংগ্রেসের প্রথম রিপাবলিকান সদস্য মারজোরি টেইলর গ্রিনি ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত।

আরও সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, কয়েকজন রিপাবলিকান নেতাও এখন ইসরায়েলের সমালোচনা করছেন, বিশেষ করে গাজায় খাদ্যাভাব ও মানবিক সংকটে তাদের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসছে। ট্রাম্পকেও গাজায় খাদ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য চাপ বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডেমোক্র্যাট পার্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপের কারণেও রিপাবলিকানদের মধ্যেও ইসরায়েল নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। তারা গাজায় নিরবিচ্ছিন্ন খাদ্য ও মানবিক সাহায্য দ্রুত পৌঁছানোর দাবি জানাচ্ছেন।

বিশ্লেষकों ধারণা, মার্কিন জনমনে ফিলিস্তিনের জন্য সহানুভূতি বাড়লে সেটি পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব ফেলে, তাহলে ইসরায়েলের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে। কেননা, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইসরায়েলকে।

গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষের সত্যতা নিশ্চিত করল আইপিসি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষের বিষয়টি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। সংস্থাটি তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজা শহর ও আশেপাশের এলাকা এখন দুর্ভিক্ষের তীব্র পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে পরিস্থিতি যথেষ্ট ভয়াবহ বলে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

আইপিসির মতো সংস্থা সরাসরি দুর্ভিক্ষের ঘোষণা না দিলেও, তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য এজেন্সিগুলি দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি বেশ গুরুতর এবং দ্রুত যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে।

গাজায় নিহতের বেশি অংশ বেসামরিক নাগরিক

গাজা উপত্যকার ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশই সাধারণ বেসামরিক লোক। এই তথ্য এসেছে ইসরায়েলি সেনাদের গোয়েন্দা তথ্যের গোপন নথি বিশ্লেষণের মাধ্যমে, যা ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সম্প্রতি প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৯ মে অবধি ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ধারণা, হামাস ও ইসলামিক জিহাদের প্রায় ৮ হাজার ৯০০ যোদ্ধা নিহত বা সম্ভাব্য নিহত হয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার, যেখানে মহিলারাও রয়েছেন। তবে, এই সংখ্যার সঙ্গে প্রতিযোগিতাহীনভাবে দেখা যায়, নিহতের মধ্যে ৮৩ শতাংশই সাধারণ মানুষ, যারা নিরস্ত্র ও অমূল্য জীবনের অধিকারী।

দ্য গার্ডিয়ান এও জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি সিরিয়া ও সুদানের গৃহযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যেখানে বেসামরিক মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম ছিল। এখন গাজায় নিরবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি গণহত্যার মত ঘটনাও হতে পারে, যেখানে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক গণহত্যা চালাচ্ছে। তবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের ডেটার সঙ্গে সরাসরি অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তারা বলে, ‘প্রতিবেদনে উল্লেখিত সংখ্যাগুলো ভুল’—কিন্তু কোন তথ্যটি ভুল তা উল্লেখ করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *