123 Main Street, New York, NY 10001

জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকা জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ডিজিটালাইজেশনের প্রভাবের কারণে নারীরা অন্যতম বেশি চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন। একই সময়ে পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি রয়েছে, তবে নারীদের জন্য এটি বেশি প্রভাব ফেলতে পারে, যা কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বাড়ানোর আশঙ্কাও জোরালো করে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নারীদের হাতে থাকা মোট চাকরির প্রায় ২৭.৬ শতাংশ কাজের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে স্বয়ংক্রিয় হয়ে যেতে পারে বা বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে পারে। অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২১.১ শতাংশ। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কাঠামোগত বৈষম্য, প্রযুক্তিতে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত ও নারীদের ডিজিটাল উপকরণে প্রবেশাধিকার কম থাকার বিষয়গুলো।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশেষ করে উচ্চ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ সেখানে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেশি হয় মূলত অফিস সহকারী, শিক্ষা ও প্রশাসনিক খাতে, যেখানে জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

এ ধরনের প্রবণতা আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল—প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রথম ধাপে যেখানে মূলত রুটিন বা সাধারণ কাজ স্বয়ংক্রিয় ছিল, সেখানে নারীর চাকরি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৫ লাখ নারী অফিস সহকারী, রিসেপশনিস্ট, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও ফাইল ম্যানেজমেন্টের মতো কাজ হারিয়েছেন। একই সময়ে পুরুষদের হার ছিল প্রায় ১০ লাখ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চাকরি হারানো এখন প্রধান এক চ্যালেঞ্জ,’ যেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিগুলো এখন আরও দক্ষতার স্তর অনুযায়ী কাজকে স্বয়ংক্রিয় করছে, ফলে তার প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে। বিশেষ করে জেনারেটিভ এআই বিভিন্ন ধরণের কাজের উপর প্রভাব ফেলছে, যা ভবিষ্যতে চাকরি হারানোর আকর্ষণ আরও বাড়তে পারে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রযুক্তি খাতে নারীর স্বল্প অংশগ্রহণ এই বৈষম্যকে আরও গভীর করে তুলছে। বৈশ্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিক্ষাক্ষেত্র এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এক-তৃতীয়াংশের কম, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য-সহ প্রশিক্ষিত এআই ব্যবস্থা নিয়োগ ও সিদ্ধান্তে বৈষম্য আরও গভীর করতে পারে বলে সতর্ক করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনটি বলছে, যদিও প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তবে এটি সম্পূর্ণ সমাধান নয়। পরিবর্তে, পক্ষপাতি প্রযুক্তি চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, ডিজিটালাইজেশন নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করছে, যেমন অনলাইন কাজ ও গিগ ইকোনমি, যেখানে নারীরা সময়ের সীমাবদ্ধতা বা পরিবারের দায়িত্ব এড়িয়ে কাজ করতে পারছেন।

জাতিসংঘ বলছে, ডিজিটাল প্রযুক্তি আরও নমনীয় ও উদ্ভাবনী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নের পথ খুলে দিতে পারে। তবে উন্নয়নশীল দেশে অনেক নারী এখনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ই-কমার্সের মাধ্যমে উপকৃত হলেও, এক অন্যায় ‘ডিজিটাল লিঙ্গ ব্যবধান’ তাদের প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সুবিধা দেয়, নারীর ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ চালায় এবং প্রযুক্তি খাতে নারীর কর্মসংস্থান ও নেতৃত্বে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যাতে এই বৈষম্য দূর হয় এবং নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *