২০২৬ সালে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এদিকে, গত শনিবার ভেলুসামাইপুরামে আয়োজন করা হয় তামিলাগা ভেত্রি কাজাগম (টিভিকে) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের জনসভা। ওই সমাবেশের সময় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হন। এরপরই আলোচনা শুরু হয়, কারণ এই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তামিল চলচ্চিত্রের সুপারস্টার থেকে রাজনীতিবীদে পরিণত হোৱা থালাপতি বিজয়।
থালাপতি বিজয়, যিনি জন্মেছেন ১৯৭৪ সালের ২২ জুন চেন্নাইয়ে, তার পারিবারিক নাম জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। ভক্তদের মধ্যে তিনি বেশি জনপ্রিয় ‘থালাপতি’ নামে, যা তামিল ভাষায় অর্থ ‘কমান্ডার’। এই নামটি তার নেতৃত্বের গুরুত্ব এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। বিজয় তার পিতার নাম এস এ চন্দ্রশেখর, যিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, এবং মা শোভা চন্দ্রশেখর একজন পপ গান শিল্পী। তিনি চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজ থেকে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
বিজয় sont একজন অত্যন্ত সফল অভিনেতা, ভারতের শীর্ষ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত তারকার একজন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ৬৮টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি দাতব্য কার্যক্রম ও সামাজিক উন্নয়নেও বেশ জড়িত। শিশুবয়সেই কেরিয়ারে প্রবেশ করে তিনি মূলত শিশু অভিনেতা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে পি এস ভীরাপ্পার পরিচালিত ‘ভেত্রি’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর সিনেমা জগতে পদার্পণ। এরপর, ১৯৮৫ সালে ‘নান সিগাপ্পু মানবন’ ছবিতে রজনীকান্তের সঙ্গে শিশু চরিত্রে অভিনয় করেন।
অভিনয় পাল্টে যায় তার ১৮ বছর বয়সে, যখন তিনি প্রথমবার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন ‘নালাইয়া থির্পু’ ছবিতে (১৯৯২)। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘সেন্থুরাপান্ডি’, ‘রাসিগান’, ‘দেবা’ ও ‘কোয়েম্বাটুর মাপ্পিল্লাই’ এর মতো সফল ছবিতে। ২০০৩ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে তিনি তামিল চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘তিরুমালাই’ (২০০৩), যা ঘরে তো ঘর ক্রিকেটের পাশাপাশি ব্যাপক ব্যবসা ও দর্শকের প্রশংসা লাভ করে।
বিজয় ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ইতিহাস সৃষ্টি করেন, কারণ তিনি এক চলচ্চিত্রের জন্য ২০০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেন, যা তাকে ভারতের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেতাদের তালিকার উপরে নিয়ে আসে। এই পারিশ্রমিকের মাধ্যমে তিনি শাহরুখ খান, সালমান খান, প্রভাস, আল্লু অর্জুন, রজনীকান্ত ও আমির খানের মতো তারকাদেরও পেছনে ফেলেন। এক সাক্ষাৎকারে প্রযোজক অর্চনা কালপাঠি বলেন, ‘দ্য গ্রেটেস্ট এর অফ অল টাইম’ সিনেমায় বিজয়ের পারিশ্রমিক ছিল ২০০ কোটি রুপি। এসব কারণে তিনি শুধু বলিউড নয়, আন্তর্জাতিক সিনেমার জগতেও নিজের অবস্থান সুসংহত করেছেন।
তবে, অভিনয় ক্যারিয়ার শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন বিজয়। তার শেষ ছবি ‘জনা নায়াগন’, যা ২০২৬ সালের পোঙ্গল উৎসবের সময় বড় পর্দায় মুক্তি পাবে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন রঙ্গভূমি থেকে বিদায় নেওয়ার। এরপর তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যার নাম ‘তামিলাগা ভেত্রি কাজাগম’ (টিভিকে)। এর সদর দপ্তর চেন্নাইয়ে। এই দলটি ২০২৬ সালে তামিলনাড়ু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়, যেখানে বিজয় থাকবেন দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী।
দলের মূল ভাবাদর্শ হলো ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, যা অ্যাম্বেদকারবাদ, পেরিয়ারবাদ এবং মার্কসবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত। পদত্যাগের পর, ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিজয় প্রথম জনসভা করেন যেখানে আট লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হন। তিনি বিজেপি ও ডিএমকের মতো দলগুলিকে তার দলটির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক রাজনীতি ও জাতীয় ঐক্যের জন্য লড়াই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা যায়, বিজয় দল গঠন করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছেন। তিনি অভিজ্ঞ এবং তরুণ প্রতিনিধি দিয়ে দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। ইতি মধ্যে, তারা ৭০ হাজারের বেশি বুথে এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে, যা দলের সংগঠন শক্তিশালী করার একটি বড় সূচক।
এখন প্রশ্ন হলো, কি শীঘ্রই বিজয় তার ভক্তদের রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ দিতে পারবেন কি না। যদি সফল হয়, তবে তিনি তামিলনাড়ুর রাজনীতির তারকাই শুধু নয়, নতুন এক ঐতিহ্যও গড়তে পারেন, এম জি রামাচন্দ্রন বা জয়ললিতার পথ অনুসরণ করে তামিলনাড়ুর ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে নতুন দিশা দিতে।