কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় দুটি পিও ফুটওয়ার ও চেইন্স পিও ফুটওয়ার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেছে। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে পৌর শহরের লক্ষীপুর এলাকার উসমান মার্কেটে।
স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে ঈগল পিও ফুটওয়ার ও চেইন্স পিও ফুটওয়ার কারখানার সম্পূর্ণ জিনিসপত্র ও যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। আগুন লাগার সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই এই ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তবে অখণ্ড ক্ষতির পরিমাণ সেনাৎ জানা সম্ভব হয়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল ও সরঞ্জাম পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শনিবার রাত নয়টার দিকে আগুন দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে লড়াই করে রাত সাড়ে বারোটার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় এক ডিলার ইকরাম মোল্লা রানা বলেন, ‘আমার দোকান কারখানার বিপরীত পাশে, যখন দেখলাম দুইজন দৌড়ে এসে জানালার ফাঁকা দিয়ে আগুন ছড়াচ্ছে, তখন দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে অসচেতনতা ও বন্ধ থাকায় ফোন ধরেনি, তাই দেরিতে খবর পৌঁছেছে। যদি সঠিক সময়ে খবর দিতে পারতাম, হয়তো ক্ষতি কম হত।’
কারখানা মালিক আবুল বাশার বলেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। প্রথমে একটি দল আসে, পরে আরও একটি দল এসে কাজ করতে শুরু করে। দেখা যায়, প্রথমে চেইন্স কারখানায় আগুন লাগে, পরে ধোঁয়া দেখে বুঝতে পারা যায় ফ্যাক্টরির ভিতরে মারাত্মক ধোয়া ও আগুন। এরই মধ্যে পাশের ঈগল ফ্যাক্টরিতেও আগুন ধরে যায়, আর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে মনে করা হচ্ছে।
ঈগল ফুটওয়্যারের সহকারী পরিচালক মোঃ সুহাস জানান, ‘একই সাইটে ছিলো তিনটি কারখানা—আরমকো, ঈগল ও চেইন্স। তবে চেইন্স ফ্যাক্টরিতে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ফ্যাক্টরির মালিকরা অনুপস্থিত থাকায় আগুন দ্রুত নেভাতে দেরি হয়। ততক্ষণে চেইন্সের সমস্ত সম্পদ পুড়ে গেছে। আমাদের কারখানাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, আনুমানিক ৩-৪ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
প鞋 দুর্বর্য মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আল-আ মিন মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখলাম, দুই কারখানার সব কিছু পুড়ে ছারখার। এ ঘটনায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা। একটার পর একটা অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। আমরা চাই, সরকার এই ক্ষতি পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা ও ব্যবস্থা নাক।’
পিও ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল আলম বাচ্চু বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছাই এবং দেখলাম, দুটি কারখানার সকল মালামাল পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা। সামনে শীতের মৌসুমের জন্য তাদের বহু মালামাল তৈরি থাকার কথা ছিল, কিন্তু আগুনের কারণে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই, যেন এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়া যায়।’
ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর রাজন আহমেদ জানান, ‘খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভানো হয়। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তবে ধারণা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা কোনও মেশিনের অসতর্কতা থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এর তদন্ত চলমান থাকায় প্রমাণ পাওয়া গেলে নিশ্চিত করে বলা যাবে।’